ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

বিএনপি বছরের সেরা ব্যর্থ বিরোধী দল

bd-pratidinঅনলাইন নিউজ ডেস্ক :::

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বছরের সেরা ব্যর্থ দল বিএনপি। একটি বিরোধী দল হিসেবে তাদের যে ভূমিকা থাকা উচিত ছিল তার কিছুই তারা করতে পারেনি। অন্যদিকে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বিভক্ত করা হয়েছে মানুষকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিকৃত করা হয়েছে। এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল সব ধরনের দুর্নীতি, লুটপাটের বিরুদ্ধে আইনের শাসনের রাষ্ট্র। তিনি গত রবিবার একটি টিভি চ্যানেলে টকশোতে এসব কথা বলেন। জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় এই টকশোয় আরও অংশ নেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি এমন একটি দল তারা ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখার্জীর সঙ্গে দেখা করার তাত্পর্য বুঝতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেছে সেটা না করে তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেনি। এমন দল ব্যর্থ হবে না তো কী হবে? সারাদেশে তাদের যে জনসমর্থন তা দিয়ে একটি দল যা করতে পারতো তার কিছুই তারা করতে পারেনি। তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বেশি আসন পেয়েও ক্ষমতায় বসতে পারেনি। পশ্চিম পাকিস্তানিরা কূটকৌশলে তাদের হাতে ক্ষমতা রেখে দেয়। এরপরের বছরই ১৯৭১ সালে হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। একটি নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় বসতে না দেওয়ার ষড়যন্ত্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একটি কারণ। সেই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দলটি চাতুর্য, প্রতারণা করে ক্ষমতায় আছে। নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আসিফ নজরুল বলেন, এখন এমনভাবে প্রচার করা হয় যেন একটি দল ক্ষমতায় আছে মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হয়েছে। বিষয়টি কি এমন ছিল? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে দুর্নীতি না হওয়া, ব্যাংক ডাকাতি না হওয়া, লুটপাট না হওয়া, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক মুক্তি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, প্রকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকার। এখন এর কোনটাই কি আছে? নেই। আসিফ নজরুল বলেন, গত কয়েক বছরে সমাজের ওপর তলায় কিছু সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাড়িয়ে সুবিধা দিয়ে সরকারের পক্ষে রেখেছে। এতে শুধু বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা নগরের কোন উন্নতি হয়েছে? আধা ঘণ্টার রাস্তা যেতে দুই ঘণ্টা লাগে। বড় বড় ব্রিজ আর লাইটিং কিসের উন্নয়ন! তিনি আরও বলেন, এত পত্রিকা, টিভি চ্যানেল দেখে মনে হয় মতপ্রকাশের কি মহোৎসব চলছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এরশাদ আমলে বা সামরিক আমলে দেশে যে স্বাধীনতা ছিল তা-ও এখন নেই। তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম সুশাসনের একটি সরকার। এই লক্ষ্যেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু যা হয়েছে সেটা এখন লুটপাটতন্ত্র। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যে পরিমাণ লুটপাট, ডাকাতি হয়েছে গত কয়েক বছরে, এটা পৃথিবীর কোন দেশে হয়? জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের লোক সমুদ্র পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়ায় যায়, সিঙ্গাপুরে যায়। এটা কি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চিত্র? মোটেও না। কত সংকট থাকলে এই ঝুঁকি নেয়। কৃতদাসের মতো চাকরি করে। এত খারাপ চাকরি করে সেখানে গিয়ে। সমুদ্রে ডুবে মারা যায়। সেই মৃত্যুর কোনো সুরাহা হয় না। প্রতিকার নেই। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট হয়, দুর্বিষহ জীবনযাপন করে আরেক অংশ। যখন বলি আমরা আগাচ্ছি সেটা কি ধরনের? তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক সুরক্ষায় সাফল্যের কথা প্রচার করা হয়। মাথাপিছু আয় অনেক। সরকার যেভাবে দেখায় সেটা অসত্য। সরকার এত উন্নতি করছে তাহলে একটি ফ্রি ফেয়ার নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় আসুক। মানুষ সেটা চায়। সেটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই আওয়ামী লীগ একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসুক। সেই নির্বাচনে বিএনপি আসার চেয়েও উত্তম হবে। এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেশের মানুষ যদি ভাল থাকে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় আর আইন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পায়।

পাঠকের মতামত: